বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন

জাতীয় পরিচয়পত্রে কেন এত বানান ভুল, এই ভোগান্তির শেষ কোথায়

জাতীয় পরিচয়পত্রে কেন এত বানান ভুল, এই ভোগান্তির শেষ কোথায়

পৃথিবীর অন্য রাষ্ট্রগুলো জন্মের প্রথম দিনই স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিশুর জন্মনিবন্ধন করে ফেলে এবং সে অনুযায়ী সেই শিশু যুক্ত হয়ে যায় মোট জনসংখ্যার হিসাবেও। আর আমরা এই ডিজিটাল বাংলাদেশে বসে এখন কী করছি, ভেবে দেখা দরকার।

জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে যে কালক্ষেপণ করেন সরকারের সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা, তাতে মনে হয়, সরকার তাঁদের ওপর পুরো রাষ্ট্রের যাবতীয় কাজকর্ম মাথায় বোঝা হিসেবে তুলে দিয়েছে। এত হয়রানি ও গড়িমসি কী কারণে? অনেক সময় দেখা যায়, সরকারি নির্ধারিত ফি থেকেও কয়েক গুণ বেশি জনগণ থেকে আদায় করা হয়, যা এখন ‘ওপেন সিক্রেট’ বলে বিবেচিত।

একটি জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে মানুষকে জায়গার দলিল থেকে শুরু করে বাড়ির বিদ্যুৎ মিটার বিল, নিকট আত্মীয়স্বজনের কাগজপত্রসহ প্রায় ৮ থেকে ১০টি প্রামাণ্য দলিল দরকার পড়ে কী কারণে। অহেতুক এই হয়রানির কাছে অসহায় জনগণ। এ যেন আটপৌরে শ খানেক কাব্য রচনার মতো প্রক্রিয়া। এতগুলো কাগজ কেন দরকার ভোটার হওয়ার অধিকার পেতে, এই দেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও? অথচ জন্মক্ষণে এসব প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলে, বালাম খাতায় নাম উঠে গেলে এমন হয়রানিতে পড়তে হতো না। এমন করে কি আদৌ সহজীকরণ সম্ভব নয়? আর কত যাতনার শিকার হবে সাধারণ মানুষ? রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বেলায় যে নিয়ম প্রযোজ্য, তা কেন দেশে জন্ম নেওয়া প্রকৃত নাগরিকের ওপর বর্তাবে? উপরন্তু জন্মনিবন্ধন সনদ আর জাতীয় পরিচয়পত্র দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শেষমেশ হাতে এলেও দেখা যায় হাজারও বানান ভুল! এ যেন পেয়েও তারে পেলাম না, এমন দশা।

এসব জাতীয় কাজ করানোর জন্য কতটুকু যোগ্যতাসম্পন্ন লোকবল নিয়োগ করা হয়েছে, তা প্রশ্ন থেকে যায়। যেই লাউ সেই কদু। আবার নির্ভুল বানান ঠিক করতে বছরখানেক তো লেগেই যায়। লেখক নিজেও ভুক্তভোগী। কেন এত বানান ভুল হবে? বিদ্যমান পোস্টে থাকা ব্যক্তিরা কি যোগ্যতা বলে এসেছেন নাকি অসদুপায়ে? নির্ভুল হওয়ার জন্য অনেক মানুষ স্কুলের শিক্ষকের কাছে গিয়ে তথ্য লিখিয়ে নেন। স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজেও অনেককে লিখে দিয়েছি, যাতে কম্পিউটারে ভুল না হয়। কিন্তু সেখানে লেখেন কারা, কেন এত ভুল হয় তাঁদের।

তাড়াহুড়া করে যেনতেন একটা নাম লিখে দিলেই তো আর দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। যেমন করিম বানানে হরহামেশাই দেখেছি খরীম বা করীম! আখতারের জায়গায় লেখা হয়েছে মোক্তার! মমতাজের জায়গায় আলতাজ! এসব কি কর্তব্যে অবহেলা নয়? আর এই বিষয়গুলো নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে গেলেই উল্টো খেপে যান কর্মকর্তারা। জনগণকে ধমক দিতেও তাঁদের বিন্দুমাত্র বিবেকে বাধে না। অহেতুক তাঁদের বেতন দিয়ে পোষে কেন সরকার, তা জানতে চায় জনগণ।

বাংলাদেশের জনগণ চায় জন্মনিবন্ধন সনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র জন্মক্ষণেই অটোমেটিক হয়ে যাক। যেহেতু এই দুটো কাগজ ছাড়া কোথাও কোনো সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না। তাই প্রয়োজনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিক। জন্মের কয়েক দিনের ভেতর শিশুর সব তথ্য নথিবদ্ধ হলে সে অনুযায়ী জন্মনিবন্ধন সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র তথা স্মার্ট কার্ড হয়ে যাবে নির্ভেজালভাবে। এতে জনগণের দুর্ভোগ অনেকটা লাঘব হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে কিছু মানুষ বয়স হেরফের করে ডাবল সংশোধনী করে জাল সনদ তৈরি করতে পারবে না।
আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। অযথা কেন জনগণের নিজ ভূমিতে নিজের অধিকার ভোগ করতে এত বেগ পেতে হবে? বিষয়টি অতিসামান্য না ভেবে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হোক।

পারভীন আকতার
শিক্ষক, চট্টগ্রাম

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




Archive Calendar

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  




All rights reserved@KathaliaBarta 2023
Design By Rana